পত্রিকা অফিসে ভাঙচুর হলে সরকার সেটি আইনগতভাবে দেখবে, কিন্তু ‘এটি কেবল আইনি বিষয় না’ বলে মন্তব্য করেছেন তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম।
তিনি বলেন, ‘বিগত সময়ে গণমাধ্যমের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। নানান কারণে মানুষের অনেক ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। কেন মানুষ তাদের ওপর বিক্ষুব্ধ, এটি স্পষ্ট করা সাংবাদিকদের ও ওই গণমাধ্যমের দায়িত্ব।’ মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) দুপুরে সচিবালয়ে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নেতাদের সাথে মতবিনিময়কালে তিনি এ কথা বলেন।
সম্প্রতি দ্যা ডেইলি স্টার ও প্রথম আলোর অফিসের সামনে হামলা প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, গতকাল বলেছি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। সে জায়গা থেকে সরকার ভূমিকা পালন করবে। পত্রিকা অফিসে ভাঙচুর হলে, সেটা অবশ্যই আমরা আইনগতভাবে দেখব।
তিনি বলেন, ‘গণমাধ্যমে হামলা হলে আমরা মেনে নেব না, অবশ্যই ব্যবস্থা নেব। পাশাপাশি জনগণ সভা-সমাবেশ করলে শান্তিপূর্ণভাবে করবে, সে আহ্বান জানিয়েছি। একইসাথে পুলিশ যাতে দায়িত্বশীল আচরণ করে, শান্তিপূর্ণভাবে জনগণকে সমাবেশ করতে দেয়, আমরা সেই নির্দেশনা দিয়েছি।’
গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ কোনো ষড়যন্ত্রের অংশ কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘যারা আন্দোলন করছে, তারাই ভালো বলতে পারবে। তাদের কাছে জিজ্ঞেস করেন। তারা কেন বিক্ষোভ করছে, এটা চিহ্নিত করা উচিত। এজন্য লাঠি পেটা করে সরিয়ে দেয়া উচিত নয়। তাদের সাথে কথা বললেই স্পষ্ট হয়ে যায়।’
তথ্য উপদেষ্টা বলেন, ‘একটা গুজব অনেক বড় ঘটনার জন্ম দিতে পারে। সেই জায়গায় গণমাধ্যম ও সাংবাদিকদের কাছ থেকে দায়িত্বশীল ভূমিকা প্রত্যাশা করছি। এই সরকার কোনো দলীয় সরকার নয়, তাদের নিজস্ব কোনো প্রচার মাধ্যম নেই। ফলে আমরা গণমাধ্যমের ওপর নির্ভরশীল। আমাদের নিজস্ব কোনো কর্মী বাহিনী নেই বা গণমাধ্যম নেই, যারা বর্তমান সরকারের কার্যক্রম প্রচার করবে। সেজন্য আমরা গণমাধ্যমের কাছে সহযোগিতা প্রত্যাশা করছি।’
তিনি বলেন, গত ১৬ বছরে যে প্রশাসনিক ব্যবস্থা ছিল, তা রাতারাতি বদল করে স্থিতিশীল জায়গায় নিয়ে আসা কঠিন। তবে আমরা মেট্রোপলিটন পুলিশকে গ্রামে ট্রান্সফার করেছি, মফস্বলের পুলিশ ঢাকায় আনা হয়েছে। তাদের একটু সময় লাগবে গুছিয়ে উঠতে। আর তথ্য প্রচারের ক্ষেত্রে নিরপেক্ষ সাংবাদিকতা আমাদের অনেক তথ্য নিয়ে সহায়তা করে সে জায়গা থেকে আমরা সহায়তা কামনা করছি এবং সরকারের পক্ষ থেকেও সব ধরনের সহায়তা করা হবে।
দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘পরিস্থিতি তো পরিবর্তন হবে। আমরা পুলিশ ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন আনতে চাচ্ছি। পুলিশ সংস্কার কমিশন আছে, তারা সুপারিশ করছে। সবাইকে বুঝতে হবে আমরা বিপ্লব পরবর্তী অবস্থার মধ্যে আছি।’
তিনি বলেন, ‘যেকোনো দেশে বিপ্লব পরবর্তী ও গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে পরিস্থিতি সামাল দিতে জনগণের ভেতরে যে নানা ধরনের শক্তির অংশ থাকে, তাদের অনেক ভূমিকা রাখতে হয়। পুলিশ অবশ্যই কঠোর হবে। তবে নিপীড়কের ভূমিকায় যেন না যায় বা আমরা একটা পুলিশি রাষ্ট্র যেভাবে দেখেছি সেটা আমরা প্রত্যাশা করি না। আমরা উভয় সঙ্কটের মধ্যে আছি। আমরা আশা করছি সে জায়গা থেকে আমরা উত্তরণ ঘটাতে পারব। আমরা কখনোই চাই না পুলিশ জনগণের বিপক্ষে, ছাত্রদের বিপক্ষে দাঁড়াক, আন্দোলনে গুলি চালাক।’
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, সোহরাওয়ার্দী কলেজের ছাত্র নিহতের বিষয়ে বিগত সরকারের দলীয় কর্মীরা ব্যাপকভাবে প্রচার করেছে। বিগত ফেসিস্ট সরকারের লুটপাট করা টাকা এখন ব্যাপকভাবে ব্যবহার করছে। দেশে ও দেশের বাইরে এই সরকারের বিরুদ্ধে নানা ধরনের গুজব ছাড়াচ্ছে।
সূত্র : ইউএনবি
খুলনা গেজেট/এএজে